যশোরের বেনাপোল পৌরসভা এলাকায় মৃত টেনাই মোড়লের স্ত্রী মরিয়ম বিবিকে মৃত দেখিয়ে সৎছেলেদের বিরুদ্ধে কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ায় মরিয়ম বিবির জীবন কাটছে অনাহারে, আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে।
মরিয়ম বিবির অভিযোগ, ওয়ারিশ সনদের ফটোকপিতে তার নামের আগে মৃত লিখে জালিয়াতি করা হয়েছে। এভাবে তার সব সম্পদ লিখে নিয়েছেন তার স্বামীর প্রথম পক্ষের সন্তানরা।
মরিয়ম বিবি বলেন, ‘নিজের সম্পদ ফিরে পেতে গত কয়েক বছর ধরে আমি ঘুরছি আদালতের বারান্দায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর সতিন-সন্তানরা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আশ্রয় নিছি অন্যের বাড়িতে, সেখানে কাজ করে ভাত জোটে।’
প্রতিবেশী আব্দুল জলিল বলেন, ‘টেনাই মোড়ল জীবিত থাকাবস্থায় তার আগের দুই স্ত্রীর মৃত্যু হয়। ২০০৮ সালে টেনাই মোড়লের মৃত্যু হয়। প্রথম স্ত্রীর পক্ষের চার ছেলেমেয়ে থাকলেও অন্য দুই ঘরে কোনো সন্তান নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘টেনাই মোড়লের মৃত্যুর কয়েক দিন পরেই প্রথম স্ত্রীর চার ছেলেমেয়ে মরিয়ম বিবিকে স্বামীর ভিটেবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। অসহায় অবস্থায় আমার বাড়িতে তাকে আশ্রয় দেয়া হয়।’আব্দুল জলিল জানান, ২০১২ সালে বেনাপোল পৌরসভার একটি ওয়ারিশ সনদ নিয়ে মূল ওয়ারিশ সনদ ফটোকপি করে মরিয়ম বিবিকে মৃত দেখান তারা। পরে ওই ওয়ারিশ সনদ নিয়েই মরিয়ম বিবির সব সম্পদ তাদের নামে নামজারি করে নেয়।বেনাপোল পৌরভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন ঘটনা জেনে মরিয়ম বিবিকে ‘জীবিত’ হিসেবে সনদ দেন। মেয়রের প্রত্যয়নপত্রসহ অন্য তথ্যপ্রমাণ নিয়ে পরে নিজের সম্পদ ফিরে পেতে আদালতে জমা দেন মরিয়ম।
মেয়র লিটন বলেন, ‘পরে সব দলিল-প্রমাণ দেখে ২০১৯ সালে আদালত মরিয়ম বিবির পক্ষে রায় দেন। আদালত মরিয়ম বিবিসহ টেনাই মোড়লের সব ওয়ারিশের নামে জমি নামজারি করার জন্য নোটিশও পাঠান।’টেনাই মোড়লের তিন ছেলে আলী হোসেন, নূর হোসেন ও রবিউল কোনো নির্দেশ না পাওয়ার কথা বলে আদালতে আপিল করেন। আপিলের পর দুই বছর পার হলেও রায় হয়নি।
প্রতিবেশী আব্দুল জলিল অভিযোগ করে বলেন, টেনাই মোড়লের ছেলেরা তাদের সৎমাকে আশ্রয় দেয়ায় তাকেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। বৃদ্ধ মরিয়ম বিবি বলেন, ‘আমার স্বামী টেনাই মোড়ল জীবিত থাকা অবস্থায় ভিটেবাড়ি থেকে আমার নামে ১০ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। তিনি মারা যাওয়ার পর স্বামীর প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা আমাকে নির্মম নির্যাতন করে ভিটে থেকে তাড়িয়ে দেয়।‘তারপর থেকে প্রতিবেশী আব্দুল জলিলের জমিতে ঘর তুলে বাস করছি। ওয়ারিশসূত্রে আমি সাড়ে ছয় বিঘার মতো জমি পাব; যার বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি।’
অথচ এখন মামলার খরচ চালাতেও পারছেন না তিনি।
বেনাপোল পৌরসভার কাগজপুকুর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘টেনাই মোড়লের জমির পরিমাণ ১৬ একর। মৃত্যুর আগে তৃতীয় স্ত্রী মরিয়ম বিবির নামে ভিটে থেকে ১০ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দেন।‘টেনাই মোড়লের মৃত্যুর পর তার ছেলেরা বেনাপোল ভূমি অফিসের তৎকালীন নায়েব আব্দুল মজিদকে মোটা টাকার ঘুষ দিয়ে পৌরসভার দেয়া ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি করে জীবিত মরিয়ম বিবিকে মৃত দেখিয়ে জমি-সম্পত্তি নিজেদের নামে নামজারি করে নেয়।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে টেনাই মোড়লের তিন ছেলে আলী হোসেন, নূর হোসেন ও রবিউল হোসেনকে ফোন করা হয়। তবে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তারা কেউই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি।